ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম একটি বিভাগ হচ্ছে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, দিনাজপুর ও সিলেট। এই ৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও মুযাজ্জিনগণকে ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দানের পাশাপাশি যেমনঃ গণশিক্ষা, পরিবার কল্যাণ, কৃষি ও বনায়ন, প্রাণী-সম্পদ পালন ও মৎস্য চাষ, প্রাথমিক স্বাস্থ পরিচর্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসা, বৃক্ষ রোপণ, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইসলামি ফাউন্ডেশন পরিচিতি, আদর্শ পরিবার গঠন, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকর, নারী-শিশু পাচার রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, মাদক ও জুয়ার কুফল, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু পাচার, সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহারিক ও মৌখিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে ইমামদেরকে উপার্জনক্ষম এবং সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইমামদের প্রশিক্ষিত করে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই ইমাম প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই প্রশিক্ষিত ইমামগণ তাদের প্রশিক্ষিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে অন্যদিকে দেশ ও জাতীয় পর্যায়ে আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯৫ জন জনবলের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একজন পরিচালক উক্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। উল্লেখিত প্রশিক্ষণ ছাড়াও ইউএনএফপিএ-এর অর্থানুকূল্যে "মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরন।" প্রকল্পের আওতায় প্রজনন স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমঙ্গল, এইচ আইভি এইডস, সন্ত্রাস ও জঙ্গবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ইমামগণ প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আর্থ-সামাজহিক উন্নমূলক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। শুরু থেকে ৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ৯৫ হাজার ৮৫ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত ৪৫ দিনের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে৩৪ হাজার ৩৩০ জনকে রিফ্রেসার্স কোর্সে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ২২৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৩৬১৩ জন ইমাম, মাদ্রাসার ছাত্র ও বেকার যুবককে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ৩১৩৪৮ জন ইমামকে মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। USAID –এর অর্থায়নে দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ১৫হাজার ৭০০ জন ইমামকে লিডার্স অব ইনফ্লুয়েন্স (LOI) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উপরোক্ত বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের আওতায় ২ লক্ষ ১২ হাজার ৬৪৭ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। দেশ হতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দূরীকরণ সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইমামদেরকে প্রশিক্ষিত করে তাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হচ্ছে, এতে প্রশিক্ষিত ইমামগণ গ্রাম-গঞ্জে মসজিদের জুম্মায় খুতবার পূর্বে বয়ানের মাধ্যমে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলছেন।
ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টঃ গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে ৫৬ আইনের মাধ্যমে ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়। ট্রাস্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার ট্রাস্টের অনুকূলে ২ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করেন। শুরু থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত সরকার মোট ৩২ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে মঞ্জুরী প্রদান করেন। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাস্টকে আরও ৫ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করেন। ট্রাস্টের শুরু থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত সদস্যভুক্ত ঋণ হিসেবে ৭,৪৪৩ জনকে ৮,৭৭,৯৭,৫০০ টাকা এবং আর্থিক সাহায্য (অনুদান) হিসেবে ৯,৬৪৯ জনকে ৩,৩৩,৫৮,০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রাস্টের সদস্যভুক্ত ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজারের অধিক। ট্রাস্টের কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে কোন ইমাম বা মুয়াজ্জিন মারাত্বক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব, দুরারোগ্যব্যাধি ইত্যাদিজনিত কারণে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে আর্থিক সাহায্য প্রদান, কোন ইমাম বা মুয়াজ্জিন আকস্মিকভাবে মৃত্যবরণ করলে তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান। ইমাম বা মুয়াজ্জিনকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান এবং তাঁদের পরিবারের সার্বিক কল্যাণ সাধনকল্পে কার্যক্রম গ্রহণ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস